প্রত্যয় নিউজ ডেস্কঃ করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ মহামারীতে কাবু গোটা বিশ্ব। দুনিয়ার বড় বড় গবেষণা প্রতিষ্ঠান আর ওষুধ প্রস্তুতকারীরা এখন ব্যস্ত এই ভাইরাস প্রতিরোধের টিকা আবিষ্কারে। ইতিমধ্যে শতাধিক টিকা নিয়ে কাজ এগিয়ে চলেছে। এর মধ্যে অন্তত দশটি টিকা আশার সঞ্চার করেছে।
করোনার টিকার মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে আছে চীন। দেশটি ইতিমধ্যে তাদের সেনাবাহিনীর মধ্যে একটি টিকা ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দিয়েছে। অন্যদিকে রাশিয়াও আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে টিকার অনুমোদন চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে।
তবে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আছে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন। তাদের ভ্যাকসিনটি ইতিমধ্যে প্রথম দফায় মানব শরীরে পরীক্ষা চালানো হয়েছে। এতে সফলও হয়েছে। অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন উৎপাদন ও বিক্রয়ের জন্য বহু প্রতিষ্ঠান আগ্রহী হয়েছে। কেউ কেউ চুক্তিও সম্পন্ন করেছে।
ভ্যাকসিন তৈরির দৌঁড়ে পিছিয়ে নেই যুক্তরাষ্ট্রও। দেশটির ম্যারিল্যান্ডভিত্তিক জৈবপ্রযুক্তি কোম্পানি নোভাভ্যাক্সের তৈরি একটি টিকা প্রথম ধাপের পরীক্ষায় নিরাপদ ও কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। প্রথম ধাপে ১৩১ জনের শরীরে দুইটি করে ডোজ প্রয়োগে এ ফলাফল এসেছে।
নোভাভ্যাক্সের টিকার এই ফলাফল মঙ্গলবার (০৪ জুলাই) খবর প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা সিএনএন। সংবাদমাধ্যমটি তাদের খবরে বলেছে, পরীক্ষার প্রথম ধাপে অংশ নেওয়া স্বেচ্ছাসেবীদের শরীরে নিউট্রিলাইজিং অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে।
নোভাভ্যাক্সের বরাত দিয়ে সিএনএন বলছে, করোনা থেকে সুস্থ্য হওয়া ব্যক্তিদের শরীরে সাধারণত নিউট্রিলাইজিং অ্যান্টিবডি তৈরি। এই অ্যান্টিবডি করোনা প্রতিরোধ করে। তবে সুস্থ্য হওয়া ব্যক্তির শরীরে প্রাকৃতিকভাবে যে পরিমাণ অ্যান্ডিবডি তৈরি হয়, এই ভ্যাকসিনটি তার চেয়ে চার গুণ বেশি অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।
এ বিষয়ে নোভাভ্যাক্সের প্রেসিডেন্ট ড. গ্রেগরি গ্লেন বলেছেন, ‘খুব ভালো খবর। এটা দারুণ আশাব্যঞ্জক।’
নিউইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করতে যুক্তরাষ্ট্রের এ স্বল্পপরিচিত প্রতিষ্ঠানটি সরকারের কাছ থেকে ১৬০ কোটি মার্কিন ডলার সাহায্য পেয়েছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রে নোভাভ্যাক্স ছাড়াও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করছে। এর মধ্যে মডার্না ও ফাইজার প্রথম ধাপের টিকার ফলাফল প্রকাশ করেছে। এ দুটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে । তাদের প্রথম ধাপের পরীক্ষার ফলও ইতিবাচক ছিল। গত সপ্তাহ থেকে মডার্না ও ফাইজার ৩০ হাজার মানুষের ওপর তাদের টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু করেছে।
বিশ্বের অন্তত ১০টি ভ্যাকসিন আশা জাগালেও চীন ইতিমধ্যে যে ভ্যাকসিনটি সেনাবাহিনীর মধ্যে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে সেটি তৈরি করেছে দেশটির সেনাবাহিনীর গবেষণা শাখা এবং স্যানসিনো বায়োলজিকসের (৬১৮৫.এইচকে)। জুন মাসে করোনার ভ্যাকসিনটির চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় চীন।
স্যানসিনো বলেছে, চীনের সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশন গত ২৫ জুন এডি৫-এনকোভ ভ্যাকসিনটি সৈন্যদের দেহে এক বছরের জন্য প্রয়োগের অনুমোদন দিয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, ভ্যাকসিনটি চীনের বাইরেও পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হচ্ছে। ইতিমধ্যে কানাডায় পরীক্ষামূলক প্রয়োগের অনুমোদনে দেয়া হয়েছে। তবে চীনের লজিস্টিক সাপোর্ট বিভাগের অনুমোদনের আগে এটি ব্যাপকভাবে সাধারণ মানুষের শরীরে প্রয়োগ করা হবে না।
খবরে বলা হয়েছে, বাণিজ্যিক কারণে ভ্যাকসিনটি সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য প্রকাশ করা হবে না। এমনকি সেনাবাহিনীর সদস্যদের এই ভ্যাকসিন নেয়া বাধ্যতামূলক কিনা তাও প্রকাশ করা হয়নি।
ডিপিআর/ জাহিরুল মিলন